এখন অবধি বাংলার মাটিতে টাইগাররা যতগুলো “বাংলাওয়াশ” করেছে তার মধ্যে নিশ্চিতভাবেই অন্যতম ২০১৩ এর নিউজিল্যান্ডের “বাংলাওয়াশ”। আর এই সিরিজ নিয়ে কথা বলতে গেলে বা এর স্মৃতিচারণায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে রুবেল হোসেনের সেই আগ্রাসী অবতার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একসময়ের নিয়মিত ফার্স্ট বোলার রুবেল হোসেন, গতি আর আগ্রাসনই ছিল যার মূল পরিচয়।
ক্যারিয়ারের শুরুতে বলের গতিতে চোখ ছানাবড়া করে তুলে নিতেন তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানদের উইকেট। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় কোথায় হারিয়ে গেলেন দলের একসময়কার অন্যতম ভরসার নাম রুবেল হোসেন? গ্রামীনফোন পেসার হান্টের মাধ্যমে তিনি নির্বাচকদের নজর কাড়েন । তারই ধারাবাহিকথায় তিনি জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হন বাগেরহাট জেলা থেকে উঠে আসা এই ফাস্ট বোলার।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি নিয়মিতভাবে ১৪৫ কি.মি গতিতে বল করতেন। রিভার্স সুইং করে ব্যাটসম্যানকে ফাঁদে ফেলাই সাধারণত তার শক্তিমত্তার প্রধান জায়গা। বোলিংয়ের এঙ্গেল ব্যাবহার করে প্রায়শই ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলতেন এই বোলার।
ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা স্পেলের মধ্যে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৬ রানে ৬ উইকেট স্মৃতিতে গেঁথে থাকার মত। এই ছয় উইকেটের মধ্যে রয়েছে হ্যাট্রিকও। এরপর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরেদ্ধে সেই অসাধারণ স্পেলটাকে সাত-পাঁচ না ভেবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা হিসিবে আখ্যায়িত করা যায়। জেমস অ্যান্ডারসনকে ইয়র্কারে বোল্ড করার মাধ্যমে জন্ম দিয়েছিলেন সেই আইকনিক মুহূর্তের। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে উঠেছিল।
তবে, এই ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই পারফর্মেন্স খারাপ হতে থাকে রুবেল হোসেনের। যেখানে ২০১৫ পর্যন্ত ৫৭ ম্যাচে ৫.৫৯ ইকোনমি তে বল করে নিয়েছিলেন ৭৭ উইকেট। যেখানে গড় ছিল ৩২.৭১। সেখানে ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫.৮৭ ইকোনমিতে বল করে ৩৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৯ উইকেট। যেখানে বোলিং গড় ৩৭.২৮। এরমাঝে বাদ পড়েছেন কয়েকবার আবার ফিরেছেন অভিজ্ঞতার বলে।
একসময়ের দলের ভরসা রুবেল হোসেন বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বশেষ লাল সবুজ জার্সিটা গায়ে জড়িয়েছেন ২০২১ সালে। আর এরই মধ্যে অনেক অনাড়ম্বর ভাবেই ২০২২ সালে সাদা জামা ও লাল বলকে বিদায় জানিয়েছেন এই ফাস্ট বোলার। ২৭ টেস্ট খেলে রুবেলের উইকেট কেবল ৩৬টি। বোলিং গড় ৭৬.৭৭, ১০টির বেশি টেস্ট খেলা বোলারদের মধ্যে টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে বোলিং গড় তারই!
গত বিপিএলের ফাইনালে ১৭তম ওভারে ২৩ রান দিয়ে ওই ওভারেই শিরোপা থেকে ছিটকে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। তার দায়ভার নিজের বলে মনে করেন এই ফার্স্ট বোলার। তবুও, রুবেল আশা করেন তিনি ফিরে আসবেন। আবারো লাল সবুজ জার্সিতে সাদাবলের রিভার্স সুইংয়ে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌছে দিবেন। ২০২৩ বিশ্বকাপে থাকতে চান এজন্য পার্ফমেন্স দিয়ে নজড় কাড়তে চান নির্বাচকদের।